Musa Al Hafij

 ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ  সাহিত্যে আত্মতা ও  উপনিবেশ-মোকাবেলা

মুসা আল হাফিজ

ফিলিস্তিনি  আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সুরক্ষার  সংগ্রামের অন্যতম উপাদান হলো প্রতিরোধ সাহিত্য।   এই সাহিত্যিক  ঐতিহ্য বহু  দশক ধরে বিকশিত হয়েছে। ইসরায়েলি দখলদারিত্বউপনিবেশ  এবং ফিলিস্তিনিদের উপর চাপিয়ে দেওয়া নির্মমতার  বিরুদ্ধে  ফিলিস্তিনের আত্মার আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে এই সাহিত্য 

 
 
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ  সাহিত্যের শিকড় ছড়িয়ে আছে বিশ  শতকের জমি থেকে নিয়ে  চার হাজার বছর আগের পরিপ্রেক্ষিতে। ১৮৮১ সাল থেকে ফিলিস্তিনীরা অব্যাহতভাবে  নিজেদের জমি হারাতে থাকে । পাঁচটি আলিয়া বা গণঅনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। যাতে রাশিয়া , জার্মানি ও পোল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলের লাখ লাখ ইহুদি ফিলিস্তিনী ভূমিতে দখলদারি প্রতিষ্ঠা করে প্রতারণা ও  জবরদস্তির আশ্রয়ে।অনুপ্রবেশের এই ধারা এখনো চলমান। ফিলিস্তিনের ভূমিপুত্ররা এর ফলে জমি হারিয়েছে উদ্বাস্তু হয়েছে এবং সেখানকার সাহিত্য     জমি হারানো, স্বাধীন  স্বদেশের আকাঙ্ক্ষা এবং সম্মিলিত ফিলিস্তিনি পরিচয়কে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। এর প্রধানত দু‘টি  ধাপ লক্ষ্য করা যায়। 
. ১৯৪৮ পূর্ব  সাহিত্য:  এসময়ে  বিশিষ্ট ফিলিস্তিনিদের মধ্যে  মাহমুদ দারবিশ এবং সামিহ আল কাসিম প্রমুখের কণ্ঠস্বর বিকশিত হয়।  ১৯৪৮  সালের নাকবা (বিপর্যয়) সাত লক্ষ ফিলিস্তিনীকে বাস্তুচ্যুত করেছিলো। তার আগ থেকেই উচ্ছেদের ধারা ভয়াবহ মাত্রা লাভ করছিলো। ফলে  দারবিশ-সামিহের কাব্যে   স্বদেশের জন্য নস্টালজিয়া এবং আপন ভূমিতে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা মন্দ্রিত হয়েছেহত্যা ও ধ্বংসের বিপরীতে আত্মশক্তির উচ্চারণ করেছে। 
. ১৯৪৮ পরবর্তী সাহিত্য: নাকবার পরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সাহিত্য আরও স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক সুর গ্রহণ করে। লেখক এবং কবিদের জীবন কাটছিলো  নির্বাসনে। অনেকেই ছিলেন উপনিবেশে পরিণত স্বদেশে, যেখানে মানুষের মর্যাদা থেকে বঞ্চনাই হয়ে আছে ফিলিস্তিনের প্রতিশব্দ। তখনকার কবিরা  ফিলিস্তিনি অভিজ্ঞতার মর্মভেদী ভাষাকে শৃঙ্খলা দিয়েছেন। মানবতার লাঞ্চিত গোঙানিকে নথিভুক্ত করেছেন,  বাস্তুচ্যুতি, দখলদারিত্ব এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শিল্পের তরবারিকে উচ্চকিত করেছেন। স্বাধীনতা ও  ন্যায়বিচারের সংগ্রামকে  অভিনন্দিত করেছেন। প্রতারণা ও বিশ্ববিবেকের বিকারকে খোলাসা করেছেন এবং বেঁচে থাকার অর্থকে নিত্যনবায়িত করেছেন। 
 
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সাহিত্য বারবার যে  থিমগুলো হাজির করে, তা দুই স্রোতে প্রবাহিত। এক স্রোতে দেখা যায় পৃথিবীর সকল নীতি, নৈতিকতাকে পদপিষ্ট করে  নির্মমতা কীভাবে স্বাধীন ও বিরামহীনভাবে  অসুরনৃত্য করছে । অপর স্রোতে আছে মানবিকতা, ন্যায্যতা, ইনসাফ , স্বাধীনতা ও অধিকারের মরণদশা। যার জন্য বরাদ্ধ রাখা হয়নি আহাজারির স্বাধীনতাটুকুও। কিন্তু সে এরই মধ্যে নিজের মেরুদণ্ড প্রদর্শন করছে অমীত বিক্রমে।  
 
উভয় স্রোতের বিবরণীতে যেসব   অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হয়, তার মধ্যে আছে :
(ক) বাস্তুচ্যুতি  নির্বাসন:
 কবিতা, ছোট গল্প এবং উপন্যাসগুলি তাদের ভূমির সাথে ফিলিস্তিনিদের গভীর সম্পর্ককে চিত্রিত করে, তাদের পরিচয়ের বয়ানে জমির গুরুত্বের উপর জোর দেয়।  ফিলিস্তিনি লেখক  কবিদের অনেকেই  জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ট্রমা এবং শরনার্থী জীবনের দুর্বিষহ দিন-রাত্রিকে ভাষাদান করেছেনতাওফিক আল জায়াদে কাজের  কেন্দ্রীয় বিষয় হলো নির্বাসন  ব্যক্তিগত ক্ষতি এবং আকাঙ্ক্ষার গল্প থেকে শুরু করে পরিচয়, প্রতিরোধ এবং ন্যায়বিচারের অব্যাহত  অনুসন্ধানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনী সাহিত্য নিজের পথ রচনা করেছে।  যা ফিলিস্তিনীদের ব্যথা, রক্তপাত ও বঞ্চনাকে রূপায়িত করে, যার কেন্দ্রে আছে বর্ণবাদ ও জায়নবাদের  দখলদারি। গাসসান কানাফানির "হাইফায় প্রত্যাবর্তন" এবং সামির আল ইউসেফের "আরাফাতের হাতি" এর মতো  কাজগুলি নাকবাকে একটি কেন্দ্রীয় উপাদান হিসাবে গ্রহণ করে। বিতাড়নের  এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলি কীভাবে ফিলিস্তিনি জীবন, হৃদয়  এবং ঐতিহ্যকে জর্জরিত করছে, তার সাহিত্যিক রুপায়ন ঘটেছে বহু গানে, কবিতায়, গল্পে ও উপন্যাসে। 
 
(খ) পরাধীনতা  এবং পরিচয়: 
ফিলিস্তিনি সাহিত্যের আকর্ষণীয় একটি দিক হলো পরাধীনতা ও কলোনি  কীভাবে  ফিলিস্তিনি পরিচয়কে প্রভাবিত করেছে তার অন্বেষণ। স্বাধীনতা  হারানো , সম্প্রদায়ের উৎপাটন ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হাহাকার ও প্রতিরোধের  গভীর অনুভূতি জন্ম দিয়েছে। ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক বিভক্তির মুখে একটি সুসংগত জাতীয়   পরিচয় সুরক্ষার  চ্যালেঞ্জ অনেক ফিলিস্তিনি লেখকের জন্য একটি কেন্দ্রীয় উদ্বেগ।
সুসান আবুল হাওয়ার উপন্যাস "মর্নিংস ইন জেনিন" গ্রন্থে নায়ক আমাল দেশান্তরিত হয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে  বেড়ে ওঠার সময় তার ফিলিস্তিনি পরিচয় ধরে রাখার সংগ্রামকে মূর্ত করে। তার লড়াই  বিদেশী ভূমিতে সাংস্কৃতিক শিকড় সংরক্ষণের বহুমুখি  ফিলিস্তিনি সংগ্রামের  অভিজ্ঞতাকে প্রতিফলিত করে।
মাহমুদ দারবিশের মতো লেখক নির্বাসনের ধারণাটিকে "নিরন্তর মৃত্যুর" রূপ হিসাবে চিত্রিত করেছেন। দারবিশের কবিতা দেখায় নির্বাসিত ফিলিস্তিনিরা হৃদয়ের ভেতরে নিজেদের স্বাধীনতা  নির্মাণ করেছে, স্বদেশে প্রত্যাবর্তন ও স্বাধীনতার   প্রচেষ্টায় বিশ্বের অসহযোগিতার ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যেও নিজের অপরাজেয় চেতনাকে নিশ্চয়তায় রূপান্তরিত করেছে। 
 
পরাধীনতার  গভীর আবেগগত এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব   ফিলিস্তিনি পরিচয়কে কীভাবে প্রভাবিত করে, তার অনুপম বিবরণী রয়েছে সমকালীন প্রতিরোধ সাহিত্যে। 
(গ) সম্মিলিত  স্মৃতি খোদাই : 
স্মৃতি ফিলিস্তিনি সংস্কৃতি এবং পরিচয় সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফিলিস্তিনি সাহিত্য স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার মুখর ও জীবন্ত মুহাফেজখানা, যা ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের উপর কলোনির  প্রভাবকে অঙ্কণ করে। সুসান আবুলহাওয়ার রচনা ফিলিস্তিনিদের উপর পতিত  অবিচারের সাক্ষ্য বহনের শক্তিমান নমুনা 
ফিলিস্তিনি সাহিত্য ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মিলিত স্মৃতিকে বাকমুখর রেখেছে, স্মৃতিগুলো  কথা বলছে, কাজ করছে মানুষের মনোলোকে, ইতিহাসের গভীরে।  সাহিত্য  সেই কথা ও কাজের  বিস্তারে   নিবেদিত থেকেছেভাষার মাধ্যমে  ঐতিহাসিক অন্যায়ের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং বাস্তুচ্যুতি ও নির্বাসনের মাত্রাগুলোকে  জীবিত রেখেছে। 
গাসসান  কানাফানির ছোটগল্প "মেন ইন দ্য সান" এ ধারার এক অনুপম কাজএই গল্প  একদল ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে হাজির  করে, যারা কাজের সন্ধানে সীমান্ত পেরিয়ে কুয়েতে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কানাফানি কেবল শারীরিক ভ্রমণের একটি বিবরণ দেন না, বরং এই যাত্রাকে করে তোলেন  বৃহত্তর ফিলিস্তিনি সংগ্রামের প্রতীকী উপস্থাপনা।  উদ্বাস্তুদের অভিজ্ঞতাকে নথিভুক্ত করে, কানাফানি নিশ্চিত করে যে তাদের গল্পগুলিতে ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মিলিত স্মৃতি খোদাই করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক অবিচারকে বাঙ্গময় করতে  এবং সমষ্টিগত স্মৃতির প্রচ্ছদ তৈরী করতে ফিলিস্তিনী মেধা কেবলই ফিলিস্তিনে সীমাবদ্ধ নয়।   বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি-আমেরিকান বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাইদের মতো  লেখকরাও ফিলিস্তিনি আখ্যান সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার বই "আউট অফ প্লেস" বাস্তুচ্যুতি এবং নির্বাসনের একটি ব্যক্তিগত বিবরণ হাজির  করে, যা দেশান্তরিত ফিলিস্তিনিদের সাথে অনুরণিত হয়।
(ঘ)  প্রতিরোধ এবং স্থিতিস্থাপকতা: 
ফিলিস্তিনি সাহিত্য নিজেই একটি প্রতিরোধের প্রতীক। লেখার কাজ, গল্প বলা,  ভাষা  বর্ণনার নির্মাণ এবং মেজাজ ও দর্শনে  ফিলিস্তিনী সাহিত্য আত্মসত্তাকে  জাহির করে।  ফিলিস্তিনি ইতিহাস এবং পরিচয় মুছে ফেলার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একটি শক্তিশালী ধারা বজায় রাখে
ইসমাইল শামাউত একজন ফিলিস্তিনি চিত্রশিল্পী  লেখক, তার কাজ ফিলিস্তিনি জনগণের স্থিতিস্থাপকতাকে ব্যাখ্যা করে ।  নিজের শিল্পকর্ম ও কথকতায় তিনি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরের জীবন এবং সেখানে বসবাসকারীদের অদম্য চেতনার একটি প্রাণবন্ত চিত্র উপস্থাপন করেছেন। নাজি আল আলি, আবদুল হাই মুসাল্লামের চিত্রকর্মে তাকিয়ে রয় ধ্বংসযজ্ঞ, শরণার্থী সমস্যাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ের মর্মান্তিক চোখ। ফিলিস্তিনি ঔপন্যাসিক সাহার খালিফা এর  কাজগুলি এই স্থিতিস্থাপকতার উদাহরণ দেয়। তার উপন্যাস, যেমন Wild Thorns "বন্য কাঁটা", দখলদারিত্বের অধীনে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম, দৃঢ়তা  এবং সহনশীলতাকে চিত্রিত করে।
 
এমিল হাবিবির "দ্য সিক্রেট লাইফ অফ সাইদ দ্য পেসোপটিমিস্ট" এক অনন্য  উদাহরণ,  যেখানে  ফিলিস্তিনি সাহিত্য প্রায়শই হাস্যরস ও ব্যঙ্গকে প্রতিরোধের একটি রূপ হিসেবে ব্যবহার করেছে। দখলদারিত্বের অধীনে ফিলিস্তিনি জীবনের জটিলতার মধ্য দিয়ে নায়কের গন্তব্যহীন যাত্রা ফিলিস্তিনি চেতনার অপরাজেয় বৈশিষ্টের  একটি ভাষ্য, যা প্রতিকূলতার দ্বারা বশীভূত হতে অস্বীকার করে।নাতালি হানযালে দেখিয়েছেন , প্রতিরোধই ফিলিস্তিনী সাহিত্যের প্রধান সুর। গাসসান কানাফানি ঠিকই লিখেছেন, সশস্ত্র প্রতিরোধের মতোই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্য ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় একটি নতুন মাত্রার সংযোজন করে, যা ফিলিস্তিনিদের জীবন থেকে গত অর্ধশতাব্দীতেও বিচ্ছিন্ন হয়নি। 
 
(ঙ) ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক প্রকল্পের মোকাবেলা : 
জায়নবাদী উপনিবেশ চেষ্টা করেছে ফিলিস্তিনী মনন ও সাহিত্যের কেন্দ্র বদলে দিতে। ফিলিস্তিনকে চেয়েছে ভাষাহীন করতে। কিন্তু  ফিলিস্তিনি লেখকরা নিজেদের ভূমির মতোই অনুসন্ধান করেছেন নিজেদের ভাষা।  তারা  শব্দ ব্যবহার করেছেন তাদের পরিচয় মুছে ফেলা এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিরুদ্ধে। তারা এমন আখ্যান তৈরি করেন, যা কলোনিয়াল ও জায়নবাদী  বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করে, ফিলিস্তিনি দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর দেয়। জায়নবাদী কলোনি তাদের মুখে যেসব পরিভাষা তুলে দিতে চায়, ফিলিস্তিনী সাহিত্য এর সাথে মোকাবেলা করেছে। কলোনি তাদের সম্পর্কে যে ডিসকোর্স হাজির করতে চায়, ফিলিস্তিনী সাহিত্য তাকে প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে উপস্থাপনের নিজস্ব শব্দ, মাত্রা, ঐতিহ্য ও পরিভাষাকে অবলম্বন করেছে।মুরিদ বারঘুতি থেকে নিয়ে হিবা কামাল আবু নাদা , সালমা জায়ুসি প্রমুখের কাজে যার স্বাক্ষর মুদ্রিত। 
 
 
 (চ)  মিলনের বাহন হিসেবে সাহিত্য : 
প্রতিরোধের পাশাপাশি, ফিলিস্তিনি সাহিত্য পুনর্মিলন ও বোঝাপড়ার বাহন হিসেবে কাজ করে। কিছু ফিলিস্তিনি লেখক তাদের কাজগুলিকে  সংঘাতের মধ্যে শান্তির প্রচার হিসেবে হাজির করেন
একজন ফিলিস্তিনি আইনজীবী  লেখক রাজা শেহাদেহ এর  স্মৃতিকথা "স্ট্রেঞ্জারস ইন দ্য হাউস"- পেশার অধীনে জীবনের জটিলতাগুলি অন্বেষণ করেছে। তিনি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সাথে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন সংগ্রামকে বয়ান করেন।  এর মধ্যে যে  সংঘর্ষ, তাতে  উভয় পক্ষকে মানবিক আচরণের আহবান করেনযদিও এই আহবান ফিলিস্তিনীদের প্রতি নিষ্ঠুরতাকে উপেক্ষা করে এবং তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া নিষ্ঠুরতাকে এক ধরণের নিয়তি হিসেবে স্থায়িত্ব দেয়।  শেহাদেহ  কিংবা ইজেলদিন আবু ইলাইসের  লেখার মূল সুর সংলাপ  এবং পারস্পরিক স্বীকৃতির আহ্বান এই ধারায় আছেন অনেক লেখক, যাদের মতে সাহিত্য পুনর্মিলনের পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করবে তারা দেখিয়েছেন সাহিত্য কীভাবে রাজনৈতিক সীমানা অতিক্রম করতে পারে এবং মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও সংহতিকে ভাষা দান করতে পারে!  
 
 
 বাস্তুচ্যুতি এবং নির্বাসন ফিলিস্তিনি জীবনের স্থায়ী চিত্র, ফলে সেখানকার  সাহিত্যেও তা  স্থায়ী থিম হয়ে আছে।  যা নাকবার প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি অভিজ্ঞতাকে প্রতিফলিত করে। সাহিত্যের শক্তি এই অভিজ্ঞতার মানবিক মাত্রাকে শিখায়িত করেছে।   ফিলিস্তিনের শ্বাস-প্রশ্বাস, হাসি, প্রেম ও বেঁচে থাকার বিরুদ্ধে বর্বরতা কীভাবে নিজের শক্তি প্রদর্শন করছে, তার বিচিত্র  বিবরণের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনী সাহিত্য শুধু আর্তনাদ করে না, বরং আত্মশক্তির এমন পরাক্রমও হাজির করে, সমকালীন  বিশ্বসাহিত্যে যা বিরল।

 ফিলিস্তিনি সাহিত্য কেবল একটি শৈল্পিক অভিব্যক্তি নয় বরং বাস্তুচ্যুতি   ও নির্বাসনের মধ্যে জায়নবাদী ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে   স্থায়ী মানবিক চেতনার কণ্ঠস্বর  সাহিত্য  ফিলিস্তিনিদের তাদের অস্তিত্ব জাহির করতে এবং তাদের  স্বাধীনতা হরণকে  চ্যালেঞ্জ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। 
 
 ফিলিস্তিনি পরিচয়কে আকার দানে,  সম্মিলিত স্মৃতির সংরক্ষণে,  প্রতিরোধকে জ্বালানি শক্তি সরবরাহে এবং উপনিবেশ ও বর্ণবাদের মোকাবেলায় প্রত্যক্ষ যাপনশীলতায় ফিলিস্তিনী সাহিত্য এমন এক অনন্যতায় বিকশিত। উপনিবেশ মোকাবেলায় সে রোজগার করেছে স্বকীয় বিশিষ্টতা। পশ্চিম বা অন্য কোনো কেন্দ্রকে সে স্বীকার করেনি।

 বরং নিজের ঐতিহ্য ও  হৃদয়ের তল থেকে বের করে এনেছে পথের উপাদান।  যার কাছ থেকে জীবনীশক্তির তরুণ আলোক পেতে পারে যে কোনো দেশের, যে কোনো ভাষার আত্মপ্রত্যয়ী ও মুক্তিকামী মানুষ।

No comments

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.